শিক্ষাকে মৌলিক অধিকারে পরিণত করার বিষয়ে দেশের আইন প্রণেতা (সংসদ সদস্য) ও অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে নেত্রকোনা ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ইন সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশের আয়োজনে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিচারপতি এ কথা বলেন।
সরকারের আইন প্রণেতা ও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত কিন্তু আমাদের সংবিধানে শিক্ষা মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি পায়নি। শিক্ষাকে যেন দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারে পরিণত করা হয়। রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল ও সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে আজ আমার এই আর্জি।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, “আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন যখন নাজিল হয়, প্রথম বাক্যটা ছিল ‘ইকরা বিসমি রাব্বি কাল্লাজি খালাক’। অর্থাৎ পড়, তোমার প্রভুর নামে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজন হলে সুদূর চীন দেশে যাও।”
‘তখনকার সময় বোধ হয় চীন অনেক দূরের জায়গা ছিল বা অনেক দুর্গম ছিল। সেজন্য রাসুল (সা.) বলেছিল, চীন যাও। চীনে আমাদের দেশ থেকে যেতে বেশি সময় লাগে না। তখনকার সময় হয়তো তাই ছিল, সেজন্য তিনি এই উদাহরণ টেনেছেন। অর্থটা হচ্ছে, এই বিদ্যা শিক্ষার জন্য, জ্ঞান অর্জনের জন্য কষ্ট করতে হলে তোমাকে সেই কষ্ট করতে হবে।’
আপিল বিভাগের এই বিচারপতি আরও বলেন, ‘স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, শিক্ষা হচ্ছে মানুষের মধ্যে থাকা উৎকর্ষের প্রকল্প। অর্থাৎ সব ধর্মে জ্ঞান অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।’
বিচারপতি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা যখন দেশ স্বাধীন করি, আমরা যে সংবিধান পেয়েছি এই সংবিধানের আর্টিকেল সেভেন্টিনে বলা আছে- রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির অন্যতম হলো- শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া। আইনের ভালো শিক্ষা ছাড়া যেমন ভালো আইনজীবী হওয়া যায় না, এটি বলার জন্যই আমি এই কথাগুলো বললাম।’
এ সময় আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান দেশের শিক্ষা প্রসঙ্গে বলেন, ‘শিক্ষা আমাদের এখনো মৌলিক অধিকার নয়। আমি আমার স্কুলের ৮৫ বছর পূর্তিতে শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই কথাগুলো বলেছিলাম, আপনার সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করার সুযোগ আমার হয়তো খুব একটা হবে না। আমি বিচারক, আপনি মন্ত্রী। আপনি রাজনীতিবিদ। নুরুল ইসলাম সাহেব (নুরুল ইসলাম নাহিদ) তখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন।’
বিচারপতি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালে দেয়ালে লেখা থাকে- শিক্ষাকে মৌলিক অধিকারে পরিণত করুন।’
নেত্রকোনা ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ইন সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশের সভাপতি ব্যারিস্টার এ.কে.এম. হাবিবুর রহমান হারুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন, ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সিনিয়র আইনজীবী মো. ফজলুর রহমান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও মেহেদী হাসান চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুর রেজাক খান, ঢাকাস্থ বৃহত্তর ময়মনসিংহ আইনজীবী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুল হক খান ফরিদ ও মো. খোরশেদ আলম মিয়া প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শেষে নেত্রকোনার ঐতিহ্যবাহী বালিশ মিষ্টি ও আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।